Wednesday 9 April 2014

আজ চলে যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না

অধিকাংশ সময়েই আমরা কাগজে-কলমে, কি বোর্ডে-কম্পিউটারে লিখি এক কথা, আর মুখে বলি অন্য কথা। যেমন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ব্যানার-ফেস্টুনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা হয় - 'স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ'। অথচ মুখে সবাই বলে, 'স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ'। আসলে নামটা কী - স্টামফোর্ড না স্ট্যামফোর্ড? তা এখনও জানা হয় নাই। এদিকে অত্যন্ত ক্ষীপ্রতার সঙ্গে চার বছর পার হয়ে গেছে। এতদিনে আমার অনার্স শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমার অনার্স কোর্সটা হয়ে গেছে ছোট গল্পের মত। শেষ হইয়াও হইলো না শেষ! আরও দুই হালি সাবজেক্ট বাকি। দুই হালি সাবজেক্ট বাকি- এটা কোন চিন্তার বিষয় হতে পারে না। পৃথিবীতে অসংখ্য সাবজেক্ট আছে। যতই পড়ি, কোন না কোন সাবজেক্ট বাকি থাকবেই। ধরা যাক, আমি জার্নালিজমে যত ধরনের ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব, সব নিয়ে ফেললাম। তারপরও দেখা যাবে অধিকাংশ বিষয় সম্পর্কেই আমার কোন ধারণা নাই। তাই, কী কী বাকি আছে, সেটা কোন চিন্তার বিষয়ই না। চিন্তার বিষয় হল, বন্ধুরা কেউ থাকছে না।

স্টামফোর্ড মতান্তরে স্ট্যামফোর্ডে যখন ভর্তি ফরম নিতে যাই, তখণ ফরম সরবরাহকারী ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'ম্যাডাম, ক্লাস কোথায় হবে?' তিনি বললেন, 'এখানেই হবে।' আমি কিছুটা খুশিই হয়েছিলাম। যাক, অন্তত একটা আলাদা ভবন তো আছে। তবে 'এখানেই হবে' বলতে ম্যাডাম যে ধানমন্ডি বুঝিয়েছেন, তা বুঝলাম ভর্তি হওয়ার পর! একটা মার্কেটের তিন তলায় যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট হতে পারে, সেটা আমার ধারণাতেই ছিল না। ক্লাস শুরু হওয়ার পর এটাই ছিল আমার প্রথম শিক্ষা। তখন ভেবেছিলাম, টাকা পয়সা যোগাড় করে মার্কেটে একটা দোকান নিতে পারলে খারাপ হয় না। ক্লাসের সময় ক্লাস করলাম, অন্য সময় দোকানে বসলাম। দোকানের আয় থেকে নিশ্চয়ই ফটোকপির খরচটা উঠে আসতো!

প্রথম দিকে এই ক্যাম্পাস সংক্রান্ত বিরক্তির কারণে ক্লাসেই যেতাম না। তবে ধীরে ধীরে অনিয়মিতভাবে হলেও ক্লাসে আসা শুরু করলাম। কারণ অনেক। প্রথমত ক্লাসে না গেলে অ্যাটেনডেন্সের নাম্বার পাওয়া যায় না, দ্বিতীয়ত আমার বাসার দুই পাশেই বহুতল ভবন নির্মাণ চলছে। ইট ভাঙার মেশিনের আওয়াজে বাসায় থাকা কঠিন। তারচেয়ে ক্লাসে যাওয়া ভালো। আর সবচেয়ে বড় কারণ তো বন্ধুরা। যদিও চার বছরে ক্লাসের বন্ধুদের কোন আয়োজনেই আমি অংশগ্রহন করতে পারি নাই। কেন পারি নাই তা তারা জানে বলেই তাদের কিল ঘুষি খেতে হয় নাই আমাকে। তা না হলে নিশ্চয়ই একটা ডেনটিস্টের সঙ্গে মাসে দু একবার দেখা করতে হত।

অনেকেই বলেন, 'অমুক ভার্সিটির গাছের কাছ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে।' আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ নাই। তবে পাতা আছে, বই খাতার পাতা। আমরা সেখান থেকেই হালকা পাতলা শেখার চেষ্টা করেছি। আর এ জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের শিক্ষকরা। অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতার পরও তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন আমাদের শেখানোর জন্য।

আমাদের সাংবাদিকতা বিভাগ বিশ্বের অন্যতম স্বাধীন ও সার্বভৌম বিভাগের একটি। এ বিভাগে ক্লাস বা পরীক্ষার চলাকালীণ সময়ে সর্বস্তরের জণসাধারণ দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে আসলেই ক্লাস হচ্ছে কী না। এ ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত লাগে আমার কাছে। আমার মনে হয়, দরজার বাইরে 'ক্লাস চলছে' টাইপ নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়া উচিৎ।  এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমার কাছে। যারা মনযোগ দিয়ে লেকচার শুনছে, তাদের জন্য তো অবশ্যই, বিশেষ করে যারা ক্লাসে ঘুমায় তাদের জন্যেও। ক্লাসে ঘুমানো সহজ ব্যাপার না। হঠাৎ ধুম করে দরজা খুললে ঘুমে ব্যাঘাত হতেই পারে।

তবে এই বিরক্তিকর স্বাধীনতা আমাদের ফোরটি থ্রি ব্যাচকে আর দেখতে হবে না। ব্যাচের প্রায় সবাই এখন কর্মজীবন শুরু করবে। তাদের জন্য শুভ কামনা রইলো। 'আজ চলে যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না।' ফোরটি থ্রি ব্যাচের প্রতিনিধি হিসেবে আছি আরও কয়েকদিন। অনার্স মানে সম্মান। সম্মান বর্ষ থেকে এত দ্রুত বিদায় নেওয়াটা আমার জন্য ঠিক নাও হতে পারে। তোমরা সবাই বড় বড় পদে চাকরি শুরু কর। তারপর আমি তোমাদের প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনি করবো ভাবছি। মজা হবে। আমি কাজ করবো না, তোমরা বকাও দিতে পারবা না। হাজার হোক, বন্ধু তো! :p
সবাই ভালো থাকো।

বি.দ্র. অ্যাসাইনমেন্ট করা শিখে গেছি মনে হচ্ছে। :D