Friday 3 October 2014

চমকে দেয়া ৭ সিনেমা

কিছু লোক আছে, যারা আগেই সিনেমার কাহিনী বলে দিয়ে মূল মজাটা নষ্ট করতে পছন্দ করে। ‌‌‌'‌তোমারে যে মুভিটা দিসি….জটিল! দেইখো। ফাটাফাটি। শেষ গিয়া শিওর ধাক্কা খাইবা। আমি তো দেখার সময় বুঝিই নাই অমুক আসলে ভিলেন। আর লাস্টে যখন নায়কটা মইরা গেল, তখন তো আমি পুরাই স্টিল হইয়া গেসিলাম, বুঝছো? দেইখো সিনেমাটা। লাস্টে ধাক্কা খাইবা, শিওর।’ - এ জাতীয় মানুষের কাছ থেকে সিনেমা নেওয়া বেশ বিপজ্জনক।
আবার এমন সমালোচক দর্শকও আছে, যারা সকল সিনেমা দেখেই বলে ‘ও এই কাহিনী! এইটা তো শুরুতেই বুঝছিলাম।’ এরাও কম বিপজ্জনক নয়। আমিও বোধহয় মাঝে মাঝে এই দলের সদস্য হয়ে যাই। আসলেই কিছু কিছু সিনেমার কাহিনী ধরে ফেলা যায়। তবে কিছু সিনেমা আছে, যেগুলোর কাহিনী আমি শুরুতে ধরতে তো পারিই নাই, উল্টা ‘ধাক্কা’ খাইসি। মনে দেখে মনে হইসে, ‘আরে, এইটা কী হইলো?’ মাঝে মাঝেই সেই চমকে দেয়া সিনেমাগুলো দেখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু দেখি না। প্রথমবার দেখার চমকটা নষ্ট না করাই ভালো। তেমন নয়টা ছবির কথা লিখলাম। ভয় নাই, কাহিনী বলবো না।


দ্য রেড বেলুন
রেটিং ৮.২
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: অ্যালবার্ট ল্যামোরিজ

প্যারিসের এক ছোট্ট ছেলে আর একটা লাল বেলুন নিয়েই সিনেমার গল্প সাজিয়েছেন ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যালবার্ট ল্যামোরিজ। সিনেমাটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৩৪ মিনিট। ফ্যান্টাসি নির্ভর এই সিনেমায় কোন সংলাপ নেই বললেই চলে। তারপরও আমাকে একেবারে চুম্বকের মত আকর্ষণ করে রেখেছিল সিনেমাটা। শেষ হওয়ার পরও কয়েক মুহুর্ত আক্ষরিক অর্থেই ‘স্টিল’ হয়ে ছিলাম বিস্ময়ে।
১৯৫৬ সালের এই সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অ্যালবার্ট ল্যামোরিজের ছেলে প্যাসকেল ল্যামোরিজ। অভিনয় করেছেন ল্যামোরিজের মেয়েও।




ফোনবুথ
রেটিং ৭.১
চিত্রনাট্য: ল্যারি কোহেন, পরিচালনা: জোয়েল শুমাখার

সব সময় নায়ক নায়িকা নির্ভর সিনেমা দেখেছি। অন্যধাঁচের সিনেমা তখনও দেখা হয় নাই। এইচএসসি’র পর ফোনবুথ দেখে প্রথম মনে হয়েছিল ‘সিনেমা এমনও হতে পারে?’ ফোনবুথ নিয়ে যে এমন একটা সিনেমা হতে পারে তা ভেবে মাঝে মাঝে আমি অবাকই হই। পুরো সিনেমা জুড়েই স্টু নামের এক ব্যক্তি ফোনবুথে কথা বলে অচেনা এক ব্যক্তির সঙ্গে, যে তার সম্পর্কে সব জানে। অচেনা ব্যক্তির ফোন, ফোনবুথ, স্নাইপার সব মিলিয়ে পরিচালক জোয়েল শুমাখার দারুন টেনশন আর উত্তেজনা ফুটিয়ে তুলেছেন ২০০২ সালে নির্মিত এই সিনেমাটিতে।


দ্য প্রেস্টিজ
রেটিং ৮.৫
চিত্রনাট্য: জোনাথন নোলান ও ক্রিস্টোফার নোলান
পরিচালনা: ক্রিস্টোফার নোলান



জাফরউল্লাহ শরাফতের ভাষায় বলতে হয়, ‘রুদ্ধশ্বাস, শ্বাসরুদ্ধকর, টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এক সিনেমা ওই প্রেস্টিজ। ব্যাটম্যানখ্যাত হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান, তিনি বুঝিয়ে দিলেন ড্রামা ফিল্ম কাকে বলে।’ আসলেই। দুই জাদুকরের উত্থান-পতন আর পরষ্পরবিরোধী লড়াই নিয়ে এরকম উত্তেজনাপূর্ণ সিনেমা আমি আর দেখি নাই। হিউ জ্যাকম্যান আর ক্রিস্টিয়ান বেলের অভিনয়ও ছিল দূর্দান্ত।

  
দ্য ইলিউশনিস্ট

রেটিং ৭.৬
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: নিল বার্গার


একজন জাদুকরের ভালোবাসার গল্প দ্য ইলিউশনিস্ট। নিল বার্গার নির্মিত সিনেমটা এক কথায় দূর্দান্ত। শেষের দিকে যখন ‘ও, আচ্ছা, ভালোই’ টাইপ অনুভূতি হচ্ছিল, তখনই কাহিনী এমন মোচড় দিল যে নড়েচড়ে বসলাম। আর শেষে তো দারুন চমক অপেক্ষায় ছিলোই। ছবিটা এত ভালো লেগেছিলো যে, বিকালে দেখার পর রাতে আবার দেখসি।মুভি; রিভিউ




দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রিপড পাজামাস


রেটিং ৭.৮
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: মার্ক হারম্যান


ছবির পোস্টারের লেখা স্লোগানটা খুব সুন্দর- Lines may dived us, but hope will unite us.’ ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত এই সিনেমাটা দেখে ‘এইটা কী হইলো?’ টাইপ অনুভূতি হয়েছিল। জার্মান এক সেনা কর্মকর্তার ছেলের সঙ্গে ক্যাম্পে বন্দী এক ইহুদী ছেলের অদ্ভুত বন্ধুত্বের গল্প ‘দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রিপড পাজামাস’।



লাইফ অব পাই

রেটিং: ৮
চিত্রনাট্য: ডেভিড ম্যাগি, পরিচালনা: অ্যাং লি


লাইফ অব পাই চমকে দিয়েছে গল্প আর মেকিংয়ের মাধ্যমে। পুরো সিনেমাই চমকে পরিপূর্ণ।পরে যখন ‘মেকিং অব লাইফ অব পাই’ দেখলাম, তখন আরো বেশি অবাক হয়েছি। কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে এই সিনেমাটা। এমন গল্পের আইডিয়া কখনোই আমার মাথায় আসতো না। পরিচালক অ্যাং লি-ও দারুণভাবেই গল্পটাকে সেলুলয়েডে ফুটিয়ে তুলেছেন।  


এ বিউটিফুল মাইন্ড

রেটিং: ৮.২
চিত্রনাট্য: আকিভা গোল্ডসম্যান, পরিচালনা: রন হাওয়ার্ড

যে সিনেমাগুলোর খুব নাম শুনি চারপাশে, সেগুলো কেন যেন দেখা হয় না। দেখার পর অনেক সময় হতাশও হতে হয়। ‘এ বিউটিফুল মাইন্ড’ সে রকমই বহুল আলোচিত সিনেমা। স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও শুনেছি রাসেল ক্রো’র এই সিনেমার কথা। ‘এই সিনেমা দেখস নাই? আই হাই…! দেখিস। রাসেল ক্রো…বস পাবলিক!’
দেখার পর বুঝলাম, মানুষ ভুল বলেনি। আসলেই অসাধারণ এক সিনেমটা তৈরি করেছেন পরিচালক রন হাওয়ার্ড। তরুণ প্রডিজি জন ন্যাশ আর তার কল্পনার গল্প ‘এ বিউটিফুল মাইন্ড’।  






Saturday 20 September 2014

রক্ষনাত্মক নায়ক

এক বলে ছয় রান দরকার। ব্যাটসম্যান জাভেদ ওমর। বোলার বল করলেন। ফুলটস....দেখে শুনে ছেড়ে দিলেন জাভেদ। কোন রান হল নাআআআ!
: জাভেদ ওমরেরর চাকরি হওয়া উচিৎ ডিফেন্সে। কারণ উনি ভালো ডিফেন্স করতে পারেন।
: জাভেদ ক্রিকেটার না হয়ে ফুটবলার হলে কোন পজিশনে খেলতেন?
: নিশ্চয়ই ডিফেন্সে!
এমন অনেক রসিকতাই আমি জাভেদ ওমরকে নিয়ে করেছি, করি। কিন্ত এটাও সত্য যখন বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য থাকতো ৫০ ওভার খেলা তখন জাভেদও ছিলো আমার পছন্দের ব্যাটসম্যান। তখন ক্রিকেট খেলে টাকা আয় করার কথা ভাবে নাই কেউ। ভালোবাসা থেকেই ক্রিকেট খেলতো বুলবুল, আকরাম, আতহার, সুজনরা। জাভেদও তাদের মতই। কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছ থেকে আমাদের চাহিদা বাড়লো। জাভেদও পরিণত হলেন আমার অপছন্দের ব্যাটসম্যানে। শট খেলতে পারে না, হিট করে না, রানও করে না মোট কথা তাকে আর ভালোই লাগে না। বাদ পড়লেন। অবহেলায় অবসরও নিলেন। এত দিন পর আজকে প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেও অবসর নিলেন জাভেদ ওমর। সেটাও এমনই আনুষ্ঠানিকতা যে, কেউ জানলোই না!
জাভেদ ওমর 'সেই রকম' স্টার নন। তার অবসরে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের ঝড় দূরে থাক, দু এক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ে না। হাজার হাজার মাইল দূরে জ্যাক ক্যালিসরা অবসর নেয়, আমাদের প্রোফাইল পিকচারে আসে তাদের ছবি। জাভেদ ওমরের অবসরে কারও প্রোফাইল পিক বদলায় না। অথচ এই জাভেদ আমাদের দেশেরই মানুষ। চায়ের দোকানে, কোন পত্রিকা অফিসের লিফটে, কাঁচা বাজারে, ঈদের শপিংয়ে হঠাৎই আমাদের সঙ্গে জাভেদদের দেখা হয়। ধাক্কা লাগে। কিন্তু তাদের বিদায় আমাদের স্পর্শ করে না। বহুদূরের ক্যালিস, পন্টিংয়ের বিদায়ে আমাদের চোখে পানি চলে আসে। তারাই যেন আমাদের আপনা লোক। জাভেদ ওমর আমাদের কেউ না।
পুরান বলে যখন আর উইকেট পড়বে না, তখন অধিনায়ক নতুন বল নেবেন এইটাই স্বাভাবিক। জাভেদও হয়তো এখন কোচিং করাবেন নতুনদের। তার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করেই অনেক নতুন ব্যাটসম্যান হয়তো জাতীয় দলে আসবে। আমি নিশ্চিত, এক বলে ছয় রান দরকার হলে তারা দেখে শুনে ছেড়ে দেবে না, জান দিয়ে ছয় মারার চেষ্টা করবে। তাদের পেছনে তো জাভেদরা ছিলো। জাভেদদের পেছনে কেউ ছিলো না।

_জানুয়ারি ৩, ২০১৪ তে লেখা

Friday 19 September 2014

দু:খ...

টিভিতে যেদিন জেমসের 'দুখিনী' গানটা প্রথম দেখাইসিলো, সেদিনকার কথা আমার মনে আছে। আম্মা কইসিলো, 'এটা কোন গান হল? গলাও তো ভালো না। এর গান কেন শোন তোমরা?' তারপর অনেকদিন কেটে গেছে। তুরাগ নদী থেকে অনেক বালু উঠানো হয়েছে। এতদিন পর আজ টিভিতে সেই জেমসের গান শুনে আম্মা বলল, 'বাহ, কত সুন্দর গান।...ইশ, পুরা গানটা দেখাইলো না। কতদিন জেমসের গান শুনি না।' আমি ভালোই অবাক হইলাম। হিন্দী সিরিয়াল হইলে আমার অবাক হওয়া উপলক্ষে নিশ্চিত টানা তিনটা ঠাডার আওয়াজ হইতো। আম্মার এই পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে জি বাংলা। তাদের 'সারেগামাপা' অনুষ্ঠানে আজকের পর্বে বিচারকদের একজন ছিলেন জেমস। জি বাংলায় যেহেতু জেমস বিচারক, তারমানে সে ভালো, তার গান ভালো, সবই ভালো। জীবন মানে জি বাংলা।
আম্মার মত এমন আরও অনেক মানুষকে আমি দেখসি, যারা এখন জেমসের বিরাট ভক্ত। 'না জানে কোয়ি' গানটা গাওয়ার পর তারা বুঝতে পেরেছেন, জেমস একজন বিশ্বমানের শিল্পী। অথচ তাদেরকেই এক সময় বলতে শুনেছি, 'জেমসের গান তো শুনে বখাটে পোলাপান। তুমি কি বখাটে?', 'জেমসের গান শোন তুমি? খ্যাত নাকি!' আহা, এক হিন্দী গান তাদের পাল্টে দিল। জেমস এখন রেডিসনে কনসার্ট করলে পাবলিক ৫,০০০ টাকা দিয়ে গান শুনতে যাবে। মোবাইলে ভিডিও করতে করতে চিৎকার করে বলবে, 'ভিগি ভিগি রাতেটা গান গুরু।'
শুধু গান না, শাক-সবজি, ফলমূল ছাড়া সর্বক্ষেত্রেই আলগা বিদেশপ্রীতি আমাদের। সাকিব আল হাসান ইভ টিজারকে থাবড় মারলে পাবলিক কয়, 'তুই হালারপুত ব্যাট দিয়া বল মারবি, আরেকজনরে থাবড় মারবি ক্যান? থাবড় মারার লাইগা তোরে ট্যাকা দেয়া হয়?' ওইদিকে সালমান খান কাউরে লাত্থি মারলে মানুষ কয়, 'আরে হ্যায় ইস্টার না, ইস্টাররা এরম দু একটা লাত্থি মারেই। হের লাইগাই তো হেরা ইস্টার।'
হলিউড, বলিউড এমনকি টালিউডের অনেক গাঁজাখুরি, নকল ফিল্ম আমাদের প্রিয় মুভি লিস্টে জায়গা করে নেয়। কিন্তু ঢালিউডের নকল ফিল্ম আমরা মানতে পারি না। আমির খান নকল মুভি বানাইলে সেইটা 'ইনোভেশন', শাকিব খান বানাইলে 'চুরি'। কোলকাতার 'অন্তহীন' হয় আর্ট ফিল্ম, আর ফারুকী নির্মিত 'টেলিভিশন' এর গায়ে জোটে 'এইটা তো ফিল্ম হয় নাই। নাটক বানাইসে হালায় ' লেবেল। 'পাইরেটস অব দি ক্যারিবিয়ান' এর ভুল আমাদের মাথায় ঢোকে না, আমরা মাথা ঘামাই 'ঘেটুপুত্র কমলা'র সিনেমাটোগ্রাফির ভুল নিয়ে। জর্জ ক্লুনি রাজনীতি নিয়া কথা বললে আমরা খুশি হই - 'এই লোকটা একটা মাল। কী সাহসী, স্মাট।' আর আমগো সোহেল রানা রাজনীতি করলে আমাদের গা জ্বলে যায় রাগে - 'হালায় টাকা খাইতে আইসে এই লাইনে। হালারপুত তুই সিনেমা করস, কর। পলিটিক্সে আইবি ক্যান?'
আমরা চাই না আমাদের পাশের বাড়ির, পাশের গলির কিংবা পাশের এলাকার কেউ বড় হোক। এই জন্যই আমাদের 'বড় বড়' লেখকরা হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকে সাহিত্য মনে করেন না। জীবনানন্দকে কবি মনে করেন না। কথায় কথায় শেক্সপিয়ার থেকে ওয়ার্ডসওয়ার্থ, মার্কেজ থেকে পাওলো কোয়েলহো কপচান। 'হুমায়ূন কি মার্কেজের অমুক বইটার মত একটা মাস্টারপিস লিখতে পেরেছে?' আমিও তো একই কথা বলি, 'মার্কেজ কি হুমায়ূন আহমেদের অমুক বইটার মত একটা মাস্টারপিস লিখতে পেরেছেন?
মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, এই বিদেশপ্রিয় মানুষগুলোর কারণেই আমাদের দেশের এই অবস্থা। কয়দিন পর 'বাবু একটা গান কর তো' বললেই পিচ্চি গেয়ে উঠবে, 'বেত্তমিজি দিল জানে না'। কিছু উদারপন্থি লোক তো আছেই, 'সংস্কৃতির কোন দেশ নেই, ভাষা নেই...' এমন বাণী চিরন্তনী দেয়। ওদিকে দোকানে ঝুলে 'জাব তাক হ্যায় জান মেহেদী' কিংবা 'ডোরাকেক'। এই জন্যই তো দেশের এত দু:খ।
আঁধারের সিঁদ কেটে আলোতে এসো
চোখের বোরখা নামিয়ে দেখো জোছনার গালিচা
ঘর ছেড়ে তুমি বাইরে এসো
চেয়ে দেখো রংধনু,
চেয়ে দেখো সাতরং
দুঃখিনী দুঃখ করো না,
দুঃখিনী দুঃখিনী

Wednesday 9 April 2014

আজ চলে যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না

অধিকাংশ সময়েই আমরা কাগজে-কলমে, কি বোর্ডে-কম্পিউটারে লিখি এক কথা, আর মুখে বলি অন্য কথা। যেমন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ব্যানার-ফেস্টুনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা হয় - 'স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ'। অথচ মুখে সবাই বলে, 'স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ'। আসলে নামটা কী - স্টামফোর্ড না স্ট্যামফোর্ড? তা এখনও জানা হয় নাই। এদিকে অত্যন্ত ক্ষীপ্রতার সঙ্গে চার বছর পার হয়ে গেছে। এতদিনে আমার অনার্স শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমার অনার্স কোর্সটা হয়ে গেছে ছোট গল্পের মত। শেষ হইয়াও হইলো না শেষ! আরও দুই হালি সাবজেক্ট বাকি। দুই হালি সাবজেক্ট বাকি- এটা কোন চিন্তার বিষয় হতে পারে না। পৃথিবীতে অসংখ্য সাবজেক্ট আছে। যতই পড়ি, কোন না কোন সাবজেক্ট বাকি থাকবেই। ধরা যাক, আমি জার্নালিজমে যত ধরনের ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব, সব নিয়ে ফেললাম। তারপরও দেখা যাবে অধিকাংশ বিষয় সম্পর্কেই আমার কোন ধারণা নাই। তাই, কী কী বাকি আছে, সেটা কোন চিন্তার বিষয়ই না। চিন্তার বিষয় হল, বন্ধুরা কেউ থাকছে না।

স্টামফোর্ড মতান্তরে স্ট্যামফোর্ডে যখন ভর্তি ফরম নিতে যাই, তখণ ফরম সরবরাহকারী ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'ম্যাডাম, ক্লাস কোথায় হবে?' তিনি বললেন, 'এখানেই হবে।' আমি কিছুটা খুশিই হয়েছিলাম। যাক, অন্তত একটা আলাদা ভবন তো আছে। তবে 'এখানেই হবে' বলতে ম্যাডাম যে ধানমন্ডি বুঝিয়েছেন, তা বুঝলাম ভর্তি হওয়ার পর! একটা মার্কেটের তিন তলায় যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট হতে পারে, সেটা আমার ধারণাতেই ছিল না। ক্লাস শুরু হওয়ার পর এটাই ছিল আমার প্রথম শিক্ষা। তখন ভেবেছিলাম, টাকা পয়সা যোগাড় করে মার্কেটে একটা দোকান নিতে পারলে খারাপ হয় না। ক্লাসের সময় ক্লাস করলাম, অন্য সময় দোকানে বসলাম। দোকানের আয় থেকে নিশ্চয়ই ফটোকপির খরচটা উঠে আসতো!

প্রথম দিকে এই ক্যাম্পাস সংক্রান্ত বিরক্তির কারণে ক্লাসেই যেতাম না। তবে ধীরে ধীরে অনিয়মিতভাবে হলেও ক্লাসে আসা শুরু করলাম। কারণ অনেক। প্রথমত ক্লাসে না গেলে অ্যাটেনডেন্সের নাম্বার পাওয়া যায় না, দ্বিতীয়ত আমার বাসার দুই পাশেই বহুতল ভবন নির্মাণ চলছে। ইট ভাঙার মেশিনের আওয়াজে বাসায় থাকা কঠিন। তারচেয়ে ক্লাসে যাওয়া ভালো। আর সবচেয়ে বড় কারণ তো বন্ধুরা। যদিও চার বছরে ক্লাসের বন্ধুদের কোন আয়োজনেই আমি অংশগ্রহন করতে পারি নাই। কেন পারি নাই তা তারা জানে বলেই তাদের কিল ঘুষি খেতে হয় নাই আমাকে। তা না হলে নিশ্চয়ই একটা ডেনটিস্টের সঙ্গে মাসে দু একবার দেখা করতে হত।

অনেকেই বলেন, 'অমুক ভার্সিটির গাছের কাছ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে।' আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ নাই। তবে পাতা আছে, বই খাতার পাতা। আমরা সেখান থেকেই হালকা পাতলা শেখার চেষ্টা করেছি। আর এ জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের শিক্ষকরা। অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতার পরও তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন আমাদের শেখানোর জন্য।

আমাদের সাংবাদিকতা বিভাগ বিশ্বের অন্যতম স্বাধীন ও সার্বভৌম বিভাগের একটি। এ বিভাগে ক্লাস বা পরীক্ষার চলাকালীণ সময়ে সর্বস্তরের জণসাধারণ দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে আসলেই ক্লাস হচ্ছে কী না। এ ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত লাগে আমার কাছে। আমার মনে হয়, দরজার বাইরে 'ক্লাস চলছে' টাইপ নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়া উচিৎ।  এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমার কাছে। যারা মনযোগ দিয়ে লেকচার শুনছে, তাদের জন্য তো অবশ্যই, বিশেষ করে যারা ক্লাসে ঘুমায় তাদের জন্যেও। ক্লাসে ঘুমানো সহজ ব্যাপার না। হঠাৎ ধুম করে দরজা খুললে ঘুমে ব্যাঘাত হতেই পারে।

তবে এই বিরক্তিকর স্বাধীনতা আমাদের ফোরটি থ্রি ব্যাচকে আর দেখতে হবে না। ব্যাচের প্রায় সবাই এখন কর্মজীবন শুরু করবে। তাদের জন্য শুভ কামনা রইলো। 'আজ চলে যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না।' ফোরটি থ্রি ব্যাচের প্রতিনিধি হিসেবে আছি আরও কয়েকদিন। অনার্স মানে সম্মান। সম্মান বর্ষ থেকে এত দ্রুত বিদায় নেওয়াটা আমার জন্য ঠিক নাও হতে পারে। তোমরা সবাই বড় বড় পদে চাকরি শুরু কর। তারপর আমি তোমাদের প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনি করবো ভাবছি। মজা হবে। আমি কাজ করবো না, তোমরা বকাও দিতে পারবা না। হাজার হোক, বন্ধু তো! :p
সবাই ভালো থাকো।

বি.দ্র. অ্যাসাইনমেন্ট করা শিখে গেছি মনে হচ্ছে। :D